দূর্বা ঘাসের ১০টি কার্যকারি উপকারিতা ও দূর্বা ঘাসের ব্যবহার


আমাদের বাড়ির আশেপাশে আনাচে কানাচে রাস্তাঘাটে জঙ্গলে বাগানে যত্ন ছাড়াই বেড়ে উঠে দূর্বা ঘাস। এই দূর্বা ঘাসে রয়েছে বিভিন্ন রোগ নিরাময় করার অলৌকিক সক্ষমতা। । এই দূর্বা ঘাসের বিভিন্ন রোগের নিরাময় করার সক্ষমতা জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।


দূর্বা ঘাসে রয়েছে হাজারো গুন সম্পন্ন ঔষধি গুণ। যা দুই এক লাইনে বলে শেষ করা যাবে না। দূর্বা ঘাস আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ,আমাশয় হৃদরোগ দূর করে। সুতরাং আপনি যদি দুর্বা ঘাসের উপকারিতা সম্পর্কে এবং দুর্বা ঘাসের অজানা কিছু তথ্য জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

বিস্তারিত শুরু করার পূর্বে সূচিপত্র দেখে নিনঃ

দূর্বা ঘাসের বৈশিষ্ট্য 

আয়ুর্বেদের মতে দূর্বা ঘাসকে বলা হয় মহা ঔষধি ঘাস।কারণ এতে রয়েছে হাজারো খনিজ উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম, পটাশ,সোডিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ম্যাঙ্গানিজ,আয়োডিন, প্রোটিন,শর্করা,ফসফরাস ও ফ্লাভনয়েডস।এত সব খনিজ উপাদান এক সাথে পাওয়া যায় বলে বিজ্ঞানীরা এটিকে অলৌকিক ঘাস বলেন।এর বাড়ির আশেপাশেই এমন ঔষধি গুন সম্পন্ন ঘাস বেড়ে উঠে তবুও আমরা অনেকেই এই ঔষধি গুণাগুণ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি না।               

দূর্বা ঘাস কোথায় জন্মায়

দূর্বা ঘাস আমাদের বাড়ির আশেপাশে আনাচে-কানাচে রাস্তার পাশে মাঠে ঘাটে জঙ্গলে বাগানে কোথায় নেই?সবখানেই দূর্বা ঘাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। যেখানে অন্য কোন উদ্ভিদ জন্মাতে পারেনা সেখানেও সহজে জন্মাতে পারে দূর্বা ঘাস।দূর্বা ঘাস এতই পরিচিত যে,দূর্বা ঘাস চিনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।দূর্বা ঘাস চাষ করার প্রয়োজন হয় না, এটি যেখানে সেখানে শত অযত্ন অবহেলাতেও বেড়ে ওঠে।

দূর্বা ঘাসে যে সমস্ত রাসায়নিক উপাদান আছে

টারপিনয়েড যৌন যেমন অরুনডেইন,লুপিনোন ইত্যাদি বিদ্যমান রয়েছে দূর্বা ঘাসে।এছাড়া দূর্বা ঘাস প্রোটিন,কার্বোহাইড্রেট ও বেশ কিছু অর্গানিক এসিড পাওয়া যায়।দূর্বা ঘাসের এই রাসায়নিক উপাদান গুলোর কারণে দূর্বা ঘাস এত উপকারি।আসুন জেনে নেন দূর্বা ঘাসের উপকারিতা সম্পর্কে।

দূর্বা ঘাসের উপকারিতা

  • রক্তশূন্যতা
  • কাটা ও পোড়া
  • রক্ত পরিষ্কার করে
  • ত্বকের সমস্যা
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি
  • চুল পড়া প্রতিরোধে
  • বমি ভাব বন্ধে
  • আমাশয় রোগ নিরাময়ে
  • অধিক ধাতুস্রাব রোগ প্রতিরোধে
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
  • কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ নিরাময়ে
  • পাইলসের সমস্যা দূর করে
  • সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে
  • পায়োরিয়া রোগ নিরাময়ে
  • মুখের ঘা প্রতিকারে
রক্তশূন্যতাঃ দূর্বা ঘাসের রস কে সবুজ রক্ত বলা হয়। কারণ দূর্বা ঘাসের রস পান করলে রক্তশূন্যতার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দূর্বা ঘাসের রস রক্ত পরিষ্কারক এবং লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলো ছাড়াও চোখের জ্যোতি বাড়াতেও সহায়তা করে থাকে দূর্বা ঘাসের রস। গ্রামবাংলায় অনেকের মুখে শোনা যায় সকাল বেলা খালি পায়ে শিশির ভেজা দুর্বা ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটলে চোখের জ্যোতি বাড়ে।


দূর্বা ঘাস শরীরের রেচনতন্ত্রের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রসাবে কষ্ট হয় অথচ পাতুনে রোগ হয়নি এরকম ক্ষেত্রে দূর্বা ঘাসের রস দুধ ও পানি মিশিয়ে খেলে ভালো হয়। তবে অর্শ রোগ থাকলে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

কা্টা ও পোড়াঃ ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি শরীরে কোথাও কেটে গেলে দুর্বা ঘাস চিবিয়ে বা পিষে কাটাস্থানে লাগিয়ে দিলে তাৎক্ষণিক রক্ত বন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ কেটে যাওয়া বা আঘাত জনিত রক্তক্ষরণে দুর্বা ঘাসে সামান্য পরিমাণ পানি মিশিয়ে পিষে কাটাস্থানে বা ক্ষতস্থানে দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। কাটা স্থান দ্রুত জোড়া লাগে এবং শুকিয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে দুর্বা ঘাসের শিখর ব্যবহার করলে আরো বেশি উপকার পাওয়া যায়।

ত্বকের সমস্যাঃ দূর্বা ঘাসে বিদ্যমান প্রদাহ রোদে ও জীবাণুর অধিক গুণের কারণে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন চুলকানি, লাল লাল ফুসকুড়ি, একজিমা ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে দুর্বা ঘাস অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও দুর্বা ঘাস ও হলুদ পিষে ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। দুর্বা ঘাসের রস পান করলে ঘন ঘন পিপাসা লাগা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ যাদের হজম শক্তির সমস্যা রয়েছে কিংবা মাঝে মাঝেই গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় তারা নিয়মিত সকালে উঠে এক গ্লাস দুর্বা ঘাসের রস খাবেন এতে খুব দ্রুত হজম শক্তির সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। অনেকের হজম শক্তির সমস্যা থাকলে পেট ফেঁপে থাকে, এবং খাবারে অনীহা দেখা দেয় এতে শরীর স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে যায়। তাই একটু সতর্ক হোন, আপনার যদি হজম শক্তির সমস্যা থাকে তাহলে আজ থেকেই দূর্বা ঘাসের রস পান করুন।

চুল পড়া প্রতিরোধেঃবর্তমান সময়ে সবারই একটা কমন সমস্যা হলো মাথার চুল পড়ে যাওয়া।অনেকে অনেক ভাবে চিকিৎসা নেয় কিন্তু কাজ হয় না চুল পড়ে যায়।এক্ষেত্রে দূর্বা ঘাসের যুগান্তরী কার্যকারিতা রয়েছে।আসুন জেনে নেই চুল পড়া প্রতিরোধে দূর্বা ঘাসের ব্যবহার সম্পর্কে।চুল পড়া প্রতিরোধে একটি পাত্রে ১ লিটার নারিকেল তেল মৃদুতাপে জ্বাল করে ফেনা দুর করে নিতে হবে।

তারপর দূর্বা ঘাসের টাটকা রস ২০০ মিলি সম্পূর্ণ তেলে মিশিয়ে পুনরায় জ্বাল দিয়ে চুলা হতে নামিয়ে ছেঁকে তা সংরক্ষণ করতে হবে।প্রতিদিন গোসলের আগে ১ ঘন্টা আগে সংরক্ষিত তেল চুলে মাখতে হবে।নিয়মিত ২-৩ মাস ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।

বমি ভাব বন্ধেঃঅনেকেই যাত্রাপথে বমি করেন বা বমি বমি লাগে।তাদের ক্ষেত্রে বমি ভাব বন্ধের জন্য দূর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ১চা চামচ চিনি সহকারে ১ঘন্টা পর পর খেতে হবে।অন্যথায় বমি ভাব কেটে গেলে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

আমাশয় রোগ নিরাময়েঃআমাশয় রোগের জন্য দূর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ডালিম পাতা কিংবা ডালিমের ছালের রস ৪-৫ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ বার খেতে হবে।এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে আমাশয় ভালো হয়ে যায়।

অধিক ঋতুস্রাব রোগ প্রতিরোধেঃযে সকল মেয়েদের ঋতুস্রাব দেখা যায় বেশি পরিমানে তাদের জন্য দূর্বা ঘাস অত্যন্ত কার্যকারি। অধিক ঋতুস্রাব রোগের জন্য দূর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ প্রতিদিন মধুসহ ৩-৪বার খেতে হবে।এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

রক্ত পরিষ্কার করেঃদূর্বা ঘাস শরীরের রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করে। দূর্বা ঘাসে রয়েছে, প্রচুর খনিজ উপাদান যা আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং বিষাক্ত পদার্থ গুলোকে বর্জ্য পদার্থের রূপান্তরিত করে লিভারের কার্যক্ষমতা আরো বেশি বৃদ্ধি পায়।অর্থাৎ লিভারের কার্যক্ষমতা কে আরো কার্যকর করে তুলে।তাই আজ থেকে নিয়মিত এক গ্লাস দূর্বা ঘাসের রস খেতে পারেন।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়ঃদূর্বা ঘাস রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক টাই কমে যায় আপনি কি সারা জীবন ডায়াবেটিক্স নামক রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছেন?তাহলে আজ থেকে নিয়মিত দূর্বা ঘাসের এক গ্লাস রস পান করেন,এতে ডায়াবেটিসের চিন্তা দূর হবে।তাছাড়া ও দূর্বা ঘাসের রস পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ নিরাময়েঃদূর্বা ঘাসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে সাহায্য করে।আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে দূর্বা ঘাসের রস প্রতিদিন এক গ্লাস করে খাবেন।তাহলে খুব দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে পরিত্রাণ পাবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য এটি জটিল রোগ তাৎক্ষণিক সমাধান না করলে পরবর্তী সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য পাইলসে রূপান্তরিত হতে পারে।এজন্য সতর্ক হোন এবং এখন থেকে নিয়মিত এক গ্লাস করে দূর্বা ঘাসের রস খাবেন।

পাইলসের সমস্যা দূর করেঃআপনি কি পাইলসের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত?তাহলে আপনাকে আজ থেকে দূর্বা ঘাসের পেস্ট করে দয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।এভাবে কয়দিন খেলে খুব দ্রুত পাইলস নামক কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও দূর্বা ঘাস যৌন স্রাব নিরাময়ে সাহায্য করে।মেয়েদের যেকোন যৌন সমস্যায় দূর্বা ঘাস অনেক কার্যকারি যা ওষুধের মত কাজ করে।

ব্রণ ও এলার্জি রোগের নিরাময়ক হিসেবেঃআজকাল বেশিরভাগ ছেলেমেয়েদের মুখে ব্রণ ও এলার্জি জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়।এগুলো সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের জন্য হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে শরীরের হরমোন জনিত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। আপনার মুখে যদি ব্রণ অথবা এলার্জি থাকে তাহলে সপ্তাহে ২-৩ দিন দূর্বা ঘাসের পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগাবেন।এতে খুব দ্রুত ব্রণ ও এলার্জির জাতীয় সমস্যা গুলো দূর হবে।

সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেঃদূর্বা ঘাস সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনাময় ওষুধ।গর্ভধারণে অসমর্থ হলে দূর্বা ঘাস ও আতপ চাল এক সাথে বেটে বড়া করে ভাতের সাথে সপ্তাহে ৩-৪দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

পায়োরিয়া রোগ নিরাময়েঃআপনার যদি পায়োরিয়া রোগ থাকে তাহলে দূর্বা ঘাস শুকিয়ে গুড়ে করে সেই গুড়ো দিয়ে দাঁত মাজলে পায়োরিয়া রোগ সেরে যায়।এছাড়াও শ্বেতপ্রদরজনিত দূর্বলতায় দূর্বা ঘাস ও কাঁচা হলুদের রস সমপরিমাণে মিশিয়ে খেলে রোগী দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠেন।

মুখের ঘা নিরাময়েঃযাদের মুখে আলসার আছে,দূর্বা ঘাস গরম জলে সিদ্ধ করে প্রতিদিন সকালে কুলকুচি করলে মুখের ঘা ভালো হয়।এছাড়াও আয়ুর্বেদির মতে রক্ত পিক্তে দূর্বা ঘাস মহৌষধ। এরোগে মুখ,নাক ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্তস্রাব হতে পারে।এক্ষেত্রে দূর্বা ঘাসের রসের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে খাইলে রোগের উপশম হয়।

ঔষধি গুন ছাড়াও দূর্বা ঘাস আরো যে সকল কাজে ব্যবহার করা হয়

ইতিমধ্যে আমরা দূর্বা ঘাসের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। গুনাগুন ছাড়াও দুর্বা ঘাস আরো যে সকল কাজে ব্যবহার করা হয়। সে সম্পর্কে আপনাদের মাঝে এখন বিস্তারিত আলোচনা করব।
  • ধর্মীয় ক্ষেত্রে
  • হিন্দু ধর্মলম্বীদের বিবাহ অনুষ্ঠানে
  • আলপনাতে দূর্বা ঘাসের ব্যবহার
  • ফুলের তোড়াতে দূর্বা ঘাসের ব্যবহার
ধর্মীয় ক্ষেত্রেঃরোগ নিরাময়েই নয় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানেও দূর্বা ঘাসের ব্যাপক কদর রয়েছে যেমন হিন্দু ধর্মালম্বীদের পূজা অর্চনার সময় দূর্বা ঘাসের প্রচলন রয়েছে। বিভিন্ন দেবীর পূজা করার জন্য ফুল পাতা বাতি এবং বিভিন্ন ফলের মাঝে অর্চনার সামগ্রীতে দূর্বা ঘাস যোগ করে থাকেন। হিন্দু ধর্মালম্বীরা মনে করেন পূজা অর্চনায় দূর্বা ঘাস হলো পবিত্রতার প্রতীক।

শুধু হিন্দু ধর্মালম্বীরায় নয় খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের মাঝেও ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবে তাদের রীতি অনুসারে অন্যান্য সামগ্রীর পাশাপাশি দুর্বা ঘাসের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে হরেক রকম ফুল পাতা ও দূর্বা ঘাস অন্যতম। এছাড়াও বৌদ্ধ মন্দিরেও পূজা অর্চনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও পাতার মাঝে দূর্বা ঘাসের ব্যবহার লক্ষণীয়।

হিন্দু ধর্মলম্বীদের বিবাহ অনুষ্ঠানেঃ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিবাহ অনুষ্ঠানে দুর্বা ঘাসের প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে আদিবাসীদের বিবাহ অনুষ্ঠানে এবং তাদের সংস্কৃতি অনুসারে দূর্বা ঘাসের ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। বর্তমানে বাঙালি সংস্কৃতিতেও দূর্বা ঘাসের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়

মানব জীবনে দূর্বা ঘাসের অবদান অনেক। আদিবাসীদের ধর্মীয় সংস্কৃতিতে দুর্বা ঘাস গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। বিয়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ডালা সাজাতে দূর্বা ঘাস অপরিহার্য। এছাড়াও নতুন বউ বর কে বরণ করে নিতে ডালাতে সাজানো দূর্বা ঘাসের বিকল্প নেই।

আলপনাতে দূর্বা ঘাসের ব্যবহারঃ বিশেষ করে আদিবাসীদের বাড়ির দেওয়ালে বিভিন্ন কারু কাজ লক্ষ্য করা যায়। সেখানেও বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে দুর্বা ঘাস সহ অন্যান্য ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। যা বাড়ির দেওয়ালের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলে। তাছাড়াও বিভিন্ন পার্বণে দূর্বা ঘাস দিয়ে বাড়ি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়।

ফুলের তোড়াতে দূর্বা ঘাসের ব্যবহারঃ আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে ভালোবাসার বা পছন্দের মানুষকে আমরা ফুল উপহার দিতে পছন্দ করি। সেই ফুলের সাথে দুর্বা ঘাসের সমন্বয় ঘটিয়ে তোড়া বানিয়ে দিতে পারি। যা দেখতে একটু অন্যরকম কিন্তু বেশ সুন্দর ও আকর্ষণীয়। এছাড়াও ফুলের পাশাপাশি আমরা দূর্বা ঘাস দিয়ে মেয়েদের খোপা সাজাতে দেখি যা দেখতে সত্যিই মন মুগ্ধকর।

দূর্বা ঘাসের অপকারিতা

ইতিমধ্যে আপনাদের মাঝে দূর্বা ঘাসের বিভিন্ন উপকারিতা, দূর্বা ঘাসের বিভিন্ন ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এবার আমরা আলোচনা করব দুর্বা ঘাসের অপকারিতা গুলো নিয়ে যদিও দুর্বা ঘাসের সে ভাবে কোন অপকারিতা নেই তবুও আপনি যদি দূর্বা ঘাসের অপকারিতা গুলো জানতে চান তাহলে নিচে বিস্তারিত দেখুন।
  • পিত্তি থলিতে পাথর হতে পারে
  • শ্বাস কষ্ট জনিত সমস্যা হতে পারে
পিত্তি থলিতে পাথর হতে পারেঃইতিমধ্যে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে দূর্বা ঘাসেের হাজারো উপকারিতা গুণ রয়েছ। যে জিনিসের এত উপকার রয়েছে সেখানে তো একটু অপকারিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক তাই না?দূর্বা ঘাস খেলে বিভিন্ন রোগ নিরাময় হয়। যেমন দূর্বা ঘাসের রস খাইলে কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়, ডায়রিয়া, এলার্জির সমস্যা দূর হয়,তেমনি কেউ যদি অতিরিক্ত দূর্বা ঘাসের রস পান করে থাকে তাহলে তার পিত্তি থলিতে পাথর হতে পারে।

কারণ দূর্বা ঘাসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াস।তাই দূর্বা ঘাসের রস নিদিষ্ট পরিমাণে পান করতে হবে,অতিরিক্ত যে কোন কিছুই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।এছাড়াও অতিরিক্ত পান করলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শ্বাস কষ্ট জনিত সমস্যা হতে পারেঃদূর্বা ঘাসের রস শীতল পানীয় বিশেষ।দূর্বা ঘাসের রস খাওয়ায় ফলে শরীরের ক্লান্তি যেমন দূর হয় তেমনি রয়েছে হাজারো উপকারি গুণ।আপনি যদি নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত দূর্বা ঘাসের রস পান করেন তাহলে আপনার শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা হতে পারে।আশা করছি দূর্বা ঘাসের অপকারিতা সম্পর্কে আপনি বুঝতে পারছেন।

বিশেষ সর্তকতা

দূর্বা ঘাসের রস খাওয়ার পূর্ব অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ দূর্বা ঘাস খাওয়া আপনার শরীরের জন্য নিরামিষ্ট কি না জানার জন্য। সুতরাং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত উপরোক্ত তথ্যের বাস্তবিক প্রয়োগ কাম্য নয়।

লেখকের মন্তব্য

যেহেতু দূর্বা ঘাস আমাদের বাড়ির আশেপাশেই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।কিনতে আমাদের কোন অর্থ ব্যয় করতে হয় না।তাই যদি বিনামূল্যে এত ঔষধিগুণ পাওয়া যায় তাহলে এমন সুযোগ হাত ছাড়া না করাই ভালো।আজক এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি দূর্বা ঘাসের ১৫টি কার্যকরি উপকারিতা ও দূর্বা ঘাসের নানা ব্যবহার এছাড়াও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারছেন।আমার এই পোস্ট টি ধারা আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের ও জানার সুযোগ করে দিন।আর হ্যাঁ এমন আরো তথ্যমুলক পোস্ট পেতে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url