কোয়েল পাখি পালনের পদ্ধতি ২০২৪
কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি জানতে চান অথবা কিভাবে কোয়েল পাখি পালন করা যায় সে সম্পর্কে জানতে চান?অনেক ওয়েবসাইটে খোঁজাখুঁজি পরেও সঠিক তথ্য পাননি।তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন।আজকে আপনাদের মাঝে কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানাব।
এছাড়াও কোয়েল পাখির আবাসন,কোয়েল পাখির খাদ্যা,কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা ও অসুবিধা,কোয়েল পাখির রোগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে বিস্তারিত আলোচনা করব।সুতরাং আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বিস্তারিত শুরু করার পূর্বে সূচিপত্র দেখে নিনঃ
- কোয়েল পাখির বৈশিষ্ট্য
- কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা
- কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি
- কোয়েল পাখির আবাসন
- কোয়েল পাখির ব্রুডিং ব্যবস্থা
- কোয়েল পাখির জন্য খাবার
- কোয়েল পাখির বাচ্চা ফোটানোর পদ্ধতি
- খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন করার নিয়ম
- খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা
- খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনের অসুবিধা
- কোন জাতের কোয়েল পাখি ভালো
- পুরুষ এবং মহিলা কোয়েল পাখি চেনার উপায়
- কোয়েল পাখির রোগ
- পরামর্শ
- পরিশেষে লেখকের মতামত
কোয়েল পাখির বৈশিষ্ট্য
অনেকেই ভাবেন কোয়েল পাখির বৈশিষ্ট্য একই রকম।কিন্তু তা নয়,বিভিন্ন প্রকার জাত অনুসারে কোয়েল পাখির বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।গায়ে বাদামি রঙের ছোট ছোট কোয়েল পাখি দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।কোয়েল পাখি খুব দ্রুত বড় হওয়ার কারণে কোয়েল পাখি সাধারণত কম বয়সে ডিম পাড়ে।আনুমানিক ০৬ থেকে ০৭ সপ্তাহ হলেই কয়েল পাখি ডিম দেওয়া শুরু করে।
দীর্ঘদিন পর্যন্ত ডিম দেয় এবং হাঁস মুরগির ডিমের পাশাপাশি আমাদের ডিমের চাহিদা পূরণ করে।আপনি কি জানেন বর্তমানে কোয়েল পাখি থেকে মাংস উৎপাদন করা হয় এবং সেটি বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা হয়।সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে,কোয়েল পাখির মাংসের তুলনামূলক কম ফ্যাট থাকে।
তাই আপনার যদি রক্তচাপ জনিত সমস্যা থাকে তাহলে কোয়েল পাখির মাংস আপনার জন্য খুবই উপকারী।একটি প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েল পাখির ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।এর থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোয়েল পাখির বাচ্চা ফুটানোর জন্য মাত্র ১৬ থেকে ১৮ দিন সময় লাগে।
যেহেতু কোয়েল পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সময় কম লাগে তাই স্বল্প সময়ে কোয়েল পাখির বাণিজ্য ভাবে বাজারজাত করা হয়।যেহেতু কোয়েল পাখির বাচ্চা ফুটাদের সময় কম লাগে তাই এ থেকে অধিক মুনাফা পাওয়া সম্ভব।
কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা
বর্তমান সময়ে কোয়েল পাখি পালন একটি জনপ্রিয় ও লাভজনক ব্যবসা।আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন শখের বসে ও কোয়েল পাখি পালন করে থাকেন।শখের পাশাপাশি কয়েল পাখি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পালন করা যায়।চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেই কোয়েল পাখি পালনের কিছু সুবিধা সম্পর্কে।
- বর্তমান সময়ে সব কিছু দাম বাড়ার কারণে হাঁস বা মুরগি খামার করতে অনেক টাকার পুজির প্রয়োজন হয়।এখানে অল্প টাকার পুঁজি নিয়ে কয়েল পাখির খামার শুরু করা যায়।
- কোয়েল পাখির আকার ক্ষুদ্র বলে এদের লালন পালনের জন্য অনেক জায়গার প্রয়োজন হয় না।ছোট আকারের একটি খাঁচাতেই কোয়েল পাখি পালন করা যায়।একটি প্রাপ্তবয়স্ক হাঁস মুরগির জন্য যে জায়গায় প্রয়োজন হয় সেই একই জায়গাতে আপনি কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ টি কোয়েল পাখি পালন করতে পারবেন
- সাধারণত একটি হাঁস বা মুরগির থেকে ডিম পেতে ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে।কোয়েল পাখি খুব দ্রুত বড় হওয়ার কারণে কোয়েল পাখি কম বয়সে ডিম পাড়ে।আনুমানিক ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ হলেই কয়েল পাখি ডিম দেওয়া শুরু করে।দীর্ঘদিন পর্যন্ত ডিম দেয় এবং হাঁস মুরগী ডিমের পাশাপাশি আমাদের ডিমের চাহিদা পূরণ করে থাকে।একটি উন্নত জাতের প্রাপ্তবয়স্ক কয়েল পাখি বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ টি ডিম দিতে পারে।
- কোয়েল পাখির রোগ ব্যাধি কম থাকায় এদের জন্য আলাদা কোন চিকিৎসার ব্যবস্থার তেমন প্রয়োজন হয় না।পক্ষান্তরে হাঁস মুরগির প্লেগ রানীক্ষেত,এভিয়ান,গামবোরা ইত্যাদি রোগ হয় যাতে চিকিৎসায় অনেক বেশি খরচ হয়।
- বর্তমানে কোয়েল পাখি ডিমের পাশাপাশি কোয়েল পাখির মাংস বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হয়। কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।একটি মুরগির ডিম খেলে আপনি যে পরিমাণ পুষ্টি পাবেন,একই সেই পরিমাণ পুষ্টি কোয়েল পাখির ডিম পাওয়া যায়।সুতরাং মুরগির ডিমের সাথে কোয়েল পাখি ডিমের পুষ্টির তুলনা করা যায়।
- হাঁস-মুরগি পালনে প্রচুর খাদ্যে প্রয়োজন হয় সেখানে কোয়েল পাখি কম খাদ্য গ্রহণ করে খুব দ্রুত দেহের বৃদ্ধি ঘটায়।কোয়েল পাখির খাদ্যের ঘাটতি মেটানোর জন্য দিনে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম খাদ্য দিলেই খাদ্য চাহিদা মেটানো যায়।
- একটি প্রাপ্তবয়স্ক কয়েল পাখির ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।এর থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোয়েল পাখি বাচ্চা ফোটানোর জন্য ১৫ থেকে ১৮ দিন সময় লাগে।এই বাচ্চা মাত্র ৬থেকে ৭ সপ্তাহে একটি পরিণত কোয়েলে রূপান্তরিত হয়।
- কোয়েল পাখি থেকে মাংস উৎপাদন করা হয় এবং সেটি বাণিজ্যিকভাবে বাজাত করা হয়।কোয়েল পাখির মাংসে তুলনা মূলক কম ফ্যাট থাকে।যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি
বর্তমানে কোয়েল পাখি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা।কোয়েল পাখি পালন করে দেশের যুবসমাজের বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।বর্তমান সময়ে যুব সমাজ চাকরির পেছনে না ছুটে কোয়েল পাখি পালনে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।কারণ কোয়েল পাখি অতি দ্রুত বড় হয় এর ফলে কোয়েল পাখি পালন করে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
কোয়েল পাখির ডিমে ও মাংসে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে।বাংলাদেশ কোয়েল পাখি সাধারণত দুই পদ্ধতিতে পালন করা হয়।
- খাঁচায়
- ফ্লোর পদ্ধতি বা মেঝেতে
খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনের জায়গার পরিমাণ কম লাগে তাই আলাদা করে কোন আবাসন তৈরি করতে হয় না।শহর অঞ্চলে খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি বেশি লক্ষ্য করা যায়।কেননা বাসার ছাদে,বাসার বেলকুনিতে ,অল্প পরিমাণ জায়গায় খাঁচায় কয়েল পাখি পালন করা যায়।
কোয়েল পাখির আবাসন
কোয়েল পাখির আবাসন নিয়ে আপনি কি বেশ চিন্তিত?তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটি পড়া আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কারণ কোয়েল পাখির আবাসন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার ফলে কোয়েল পাখির বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করে এমন ঘর কোয়েল পাখি পালনের জন্য উপযোগী।
লিটার বা কেইজ উভয় পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন করা যায়।তবে কোয়েল পাখি যখন বাচ্চা অবস্থায় থাকে তখন দুই সপ্তাহ কেইজে রেখে পালন করা উত্তম।কারণ কোয়েল পাখির জন্য এই সময়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।তাই বাচ্চা অবস্থায় প্রথম দুই সপ্তাহ একটি কোয়েল পাখির জন্য ৭৫ বর্গ সেন্টিমিটার জায়গার প্রয়োজন হয়।
অন্যদিকে একটি প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েল পাখির জন্য খাঁচায় ১৫০ বর্গ সেন্টিমিটার এবং মেঝেতে ২৫০ বর্গ সেন্টিমিটার জায়গার প্রয়োজন হয়।খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনের ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত খাঁচার জালের ফাঁক ৩ মি.মি.×৩ মি.মি এবং তিন সপ্তাহ পর ৫মি.মি.×৫ মি.মি আকারে হওয়া প্রয়োজন।এতে কোয়েল পাখি চলাফেরা করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পেয়ে থাকে।
কোয়েল পাখির ব্রুডিং ব্যবস্থা
কোয়েল পাখির ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা অনেকটা মুরগি পালনের মতই।এজন্য কোয়েল পাখি পালন করার জন্য আপনাকে আলাদা কোন প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।আপনার যদি হাঁস-মুরগি পালনের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে,তাহলে আপনি খুব সহজেই কোয়েল পাখি পালন করতে পারবেন।একদিনের কোয়েল পাখির বাচ্চা ওজন সাধারণত ০৫ থেকে ০৭ গ্রাম হয়ে থাকে।
ব্রুডিং ঘরে কোয়েল পাখির বাচ্চা রাখার পূর্বেই অবশ্যই ঘরের তাপমাত্রা ৯০-৯৫০ফা রাখতে হবে।ব্রুডিং ঘরে কোয়েল পাখির বাচ্চা ছাড়ার পূর্বে পানি খাওয়াতে হবে।এতে করে কোয়েল পাখির বাচ্চারা পানির পাত্রের সাথে পরিচিত হতে পারে।প্রতিনিয়ত থার্মোমিটার দিয়ে ব্রুডিং ঘরে তাপমাত্রা নির্ণয় করে এবং কোয়েল পাখির বাচ্চার অবস্থা বুঝে তাপমাত্রা কম বেশি করতে হবে।সাধারণত প্রতি সপ্তাহে ৫০ফা করে তাপমাত্রা কমিয়ে ঘরের তাপমাত্রা বজায় রাখা উচিত।
কোয়েল পাখির জন্য খাবার
কোয়েল পাখিকে কি খাওয়াবেন এই নিয়ে কি আপনি ভীষণ চিন্তিত?তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটি পড়া আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরী কারণ আর্টিকেলের এই অংশ কোয়েল পাখির খাবার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।ডিম বা মাংসের জন্য কোয়েল পাখির খাদ্যে যে পরিমাণ পুষ্টি থাকা দরকার তা হাঁস মুরগির চেয়ে একটু ভিন্ন।
তাই অবশ্যই কোয়েল পাখির খাবার নিয়ে আপনাকে সচেতন হতে হবে।সাধারণত একটি প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েল পাখি প্রতিদিন ২০থেকে ২৫ গ্রাম খাবার গ্রহণ করে থাকে।যেখানে একটি মুরগি ১১০ গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম এবং একটি হাঁস প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৫০ গ্রাম খাবার গ্রহণ করে থাকে।কোয়েল পাখির বাচ্চা,বাড়ন্ত কোয়েল পাখি বা প্রজনন কাজে ব্যবহৃত স্ট্যান্ডার্ড রেশন বাজারে সহজে পাওয়া যায় না।তাই বয়স অনুসারে কয়েল পাখির রেশন কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।যথা
স্টাটারঃকোয়েল পাখির বয়স ০-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় কালকে স্টাটার পর্যায় বলা হয়।স্টাটার পর্যায়ে একটি কোয়েল পাখির জন্য প্রতি কেজি খাবারে শতকরা ২৭ ভাগ প্রোটিন এবং২৮০০ কিলোক্যালরি বিপাকীয় শক্তির প্রয়োজন।
গ্রোয়ারঃকোয়েল পাখির বয়স ৪-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় কালকে গ্রোয়ার পর্যায়ে বলা হয়।গ্রোয়ার সময় চলাকালীন গ্রোয়ার ট্রেজে প্রতি কেজি খাবারের শতকরা ২৩ ভাগ প্রোটিন এবং ২৮০০ কিলোক্যালরি বিপাকীয় শক্তির প্রয়োজন।
লেয়ার বা ব্রিডারঃকোয়েল পাখির বয়স ৬ সপ্তাহ থেকে বিক্রি পর্যন্ত সময় কালকে লেয়ার বা ব্রিডার পর্যায়ে বলা হয়।লেয়ার বা ব্রিডার ট্রেজে প্রতি কেজি খাবারে শতকরা ২২-২৪ ভাগ প্রোটিন এবং ২৭০০ কিলোক্যালরি বিপাকীয় শক্তির প্রয়োজন।একটি প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েল পাখি যখন ডিম পাড়া অবস্থায় থাকে তখন ২.৫ থেকে ৩.০% ক্যালসিয়ামের দরকার।
তবে গরমের সময় ৩.৫% প্রয়োজন হয়।সুতরাং উপরিক্ত তথ্য থেকে দেখা যায় যে,স্টাটার সময় কাল পর্যায়ে কোয়েল পাখির খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ মুরগির খাদ্যের চেয়ে বেশি লাগে।এছাড়াও জাপানিজ কয়েল পাখির ডিম পাড়া পর্যায়ে খাবারে ২২.১২% প্রোটিন এবং ২৮৮০ কিলোক্যালরি/কিলোগ্রাম এনার্জি থাকলে তাতে সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়া যায়।কোয়েল পাখির বাচ্চার জন্য প্রথম দুই সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ফ্লাট ট্রেতে খাবার দিতে হয়।
যাতে কোয়েল পাখির খাবার খেতে কোন অসুবিধা না হয়।তবে প্রথম দুই তিন দিন পেপারে খাবার দেওয়া ভালো।প্রথম সপ্তাহ থেকে দৈনিক প্রতিটি কোয়েল পাখির জন্য ৫গ্রাম করে একটি পরিষ্কার পাত্রে খাবার দিতে হয় এবং ক্রমান্বয়ে প্রতি সপ্তাহে ৫গ্রাম করে খাবার বাড়াতে হবে।একটি প্রাপ্ত পূর্ণবয়স্ক কোয়েল পাখির জন্য দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম খাবার দেওয়া প্রয়োজন।
সুষম খাদ্যঃকোয়েল পাখি যখন বাড়তে থাকে তখন কোয়েল পাখির জন্য সুষম খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।এ জন্য অবশ্যই খাদ্য তালিকায় দৈনিক সুষম খাদ্য রাখা প্রয়োজন।সুষম খাদ্য খাওয়ানোর ফলে কোয়েল পাখির দেহের ওজন বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সুষম খাদ্য গুলোর মধ্যে রয়েছে শুটকি মাছের গুড়া,তিলের খৈল,গম ভাঙ্গা,ঝিনুক চূর্ণ ,ডুমহি কুড়া, খাদ্য লবণ ও ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স।উল্লেখিত সুষম খাদ্য গুলো কোয়েল পাখির বয়স অনুসারে খেতে দিতে হবে।যা কয়েল পাখির দেহে মাংস বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করবে।
পানির পাত্রঃকোয়েল পাখির জন্য পরিষ্কার পানি এবং পানি খাওয়ার পাত্রটি অবশ্যই পরিষ্কার হওয়া বাঞ্ছনীয়।সাধারণত অটোমেটিক নিপল অথবা কাপ ড্রিংকার বা মুরগির জন্য ব্যবহৃত স্বাভাবিক পানির পাত্র কয়েল পাখির জন্য উপযোগী।স্বাভাবিক পানির পাত্রের ক্ষেত্রে ৫০টি কোয়েল পাখির জন্য একটি পাত্র।
নিপল বা কাপ ড্রিংকারের ক্ষেত্রে ৫টি পূর্ণবয়স্ক কোয়েল পাখির জন্য একটি করে পাত্র ব্যবহার করা উত্তম।তবে কোয়েল পাখি খাঁচার জন্য ছোট আকারের এবং পরিপূর্ণ কোয়েল পাখির জন্য বড় পাত্র ব্যবহার করা যায়।সর্বদা পরিষ্কার পানি এবং পরিষ্কার পাত্রের জন্য কোয়েল পাখির কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।
কোয়েল পাখির বাচ্চা ফোটানোর পদ্ধতি
প্রাকৃতিক (Natural) এবং কৃত্রিম (Artificial) উভয় পদ্ধতি অবলম্বন করে কোয়েল পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো যায়।সাধারণত কোয়েল পাখি ডিমে তা দেয় না।তাই প্রাকৃতিক ভাবে বাচ্চা ফোটানোর জন্য কুচে মুরগি দিয়ে ডিমে তা দেওয়া হয়।কৃত্রিম উপায়ে কোয়েল পাখির বাচ্চা ফুটানোর ক্ষেত্রে ইনকিউবেটরের সেটার (Setter)হেচাররের (Hatcher) ট্রের ডিজাইন কোয়েল পাখি ডিমের আকারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
কোয়েল পাখির ডিম প্রথম ১৫ দিন সেটিং ট্রিতে এবং বাকি ৩ দিন হ্যাচারে রাখতে হয়।সেটিং এ অবস্থায় প্রতি দুই-চার ঘন্টা পর পর ডিম ট্রেনিং (Turning) করতে হবে যাতে (Embryo)খোসার সাথে লেগে না যায়।প্রথম ১৫ দিন ইনকিউবেটরের তাপমাত্রা ৯৮-১০১০ ফা এবং আপেক্ষিক আদ্রতা ৫০-৬০% এবং পরের ৩ দিন ৬০-৭০% রাখা বাঞ্চনীয়।ডিমে বসানোর ১৬-১৮ দিনের মাথায় ডিম ফোটে বাচ্চা বের হয়ে আসে।
খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন করার নিয়ম
খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন করা যায়।খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে।যেমন বাড়তি কোন জায়গার প্রয়োজন হয় না সল্প খরচে এবং অল্প পরিশ্রমে খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন করা যায়বাজারে কোয়েল পাখি পালন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাঁচা পাওয়া যায়।লোহার খাঁচা,বিল্ডার খাঁচা,বর্ডার খাঁচা,বিয়ারিং খাঁচা বাজারে দেখতে পাওয়া যায়।
কোয়েল পাখির পরিমানের উপর নিরভর করে খাঁচা তৈরি করা হয়।প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক কোয়েল পাখির জন্য খাঁচায় ১৫০ বর্গ সেন্টিমিটার এবং মেঝেতে ২৫০ বর্গ সেন্টিমিটার জায়গার প্রয়োজন হয়।কোয়েল পাখির জন্য এমন খাঁচা তৈরি করতে হবে যাতে খাঁচার একপাশে পানির পাত্র ও আরেক পাশে খাবার পাত্র রাখা যায়।যাতে করে কোয়েল পাখি সহজে পানি ও খাবার গ্রহন করতে পারে।
খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা
কোয়েল পাখি সাধারণত দুই ভাবে পালন করা যায়।যথা খাঁচায় ও মেঝেতে।তবে মেঝেতে কোয়েল পাখি পালন করার চেয়ে খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন করার সুবিধা গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে কোয়েল পাখি পালন করা আরো সহজ হয়।
- ডিম গড়িয়ে এসে ট্রেতে জমা হয়।
- ডিম ট্রেতে জমা হয় বলে সংগ্রহ করতে সুবিধা হয়।
- সহজে খাবার ও পানি দেওয়া যায়।
- ডিম ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।
- পাখির পায়খানা খাঁচার নিচে ট্রেতে জমা হয় ফলে বারবার খাঁচা পরিষ্কার করার ঝামেলা থাকে না।
- একটি খাঁচায় পাঁচটি তাক করে অনেক কোয়েল পাখি পালন করা যায়।
- ফ্লোর পদ্ধতি চেয়ে পাঁচ গুন কোয়েল পাখি পালন করা সম্ভব।
- খাঁচা পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা সহজ বলে কোয়েল পাখির রোগ বালাই কম হয়।
- খাঁচায় নেটের ছিদ্র ছোট বলে সহজে ইঁদুর ডুকতে পারে না।
- ঘন ঘন লিটার পরিষ্কার করার ঝামেলা থাকে না।
- খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন করলে এমোনিয়া গ্যাস হওয়ার সম্ভবনা খুব কম থাকে।
- কোয়েল পাখি খুব তাড়াতাড়ি বড় হয় এবং দৈনিকভাবে পাখির বৃদ্ধির চাকচিক্য লক্ষ্য করা যায়।
খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনের অসুবিধা
খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি অসুবিধা রয়েছে।বিভিন্ন ভাবে কোয়েল পাখি পালন করে লাভবান হওয়া যায়।তবে কোন ভাবে পালন করা সহজ এবং কোন ভাবে পালন করলে অসুবিধা কম হয়।তা জানা থাকলে কোয়েল পাখি পালনে উপকৃত হওয়া যায়।
- লোহার খাঁচা তৈরি করতে খরচ বেশি হয়।
- নিয়মিত খাঁচার ট্রে পরিষ্কার না করলে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
- বাঁশের খাঁচা তৈরি করলে বেশি দিন টিকে না।খাঁচার তৈরির পর খাঁচা রাখার জন্য লিটারের একটি শেড তৈরি করতে তার জন্য আলাদা ব্যয় করতে হয়।
কোন জাতের কোয়েল পাখি ভালো
বর্তমানে প্রায় ১৮টি জাতির কোয়েল পাখি বাজারে পাওয়া।যার প্রত্যেকটির জাত ব্যবসার জন্য লাভজনক।কিছু জাতের কোয়েল পাখি ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এবং কিছু জাতের কোয়েল পাখি মাংস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।এ সকল জাতির মধ্যে জাপানিজ কোয়েল পাখি পালন বেশি হয়।জাত উপজাত ভেদে কোয়েল পাখির ওজন আকৃতির রং ডিম পারার ভিত্তিতে পার্থক্য হয়ে থাকে।
এছাড়াও জাপানি লেয়ার কোয়েল পাখির জাত হিসেবে বেশি পরিচিতি।লেয়ার জাতের কোয়েল পাখি ছোট খাটো হয়ে থাকে।এ জাতীয় কোয়েল পাখির ঠোঁট ছোট ও পা খাটো হয়।ডিমের খোসার রং হালকা বাদামি বর্ণের হয়।এ সকল জাতের কোয়েল পাখি বছরে ২৯০ থেকে ৩০০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে।
এছাড়া বাজারে অনেক লেয়ার পার্টি উৎপাদনকারী কোয়েল পাখির জাত পাওয়া যায় তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কোয়েল পাখির নাম।
- টুক্সিডো
- ফারাও
- ইংরেজি হোয়াইট
- ব্রিটিশ রাঞ্চ
- মাঞ্চুরিয়ান গোল্ডন
পুরুষ এবং মহিলা কোয়েল পাখি চেনার উপায়
সাধারণত বাচ্চা কোয়েল পাখির ব্র্যান্ড পরীক্ষা করে পুরুষ এবং মহিলা কোয়েল পাখি চেনা যায়।তবে সাধারণ পদ্ধতিতে তিন ভাবে পুরুষ এবং মহিলা কোয়েল পাখি চেনা যায়।আসুন তাহলে পুরুষ এবং মহিলা কোয়েল পাখি চেনার উপায় উপায় গুলো জেনে নেয়।
বুকের পালক দেখেঃসাধারণত পুরুষ কোয়েল পাখির বুকের পালক গুলো হালকা বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে এবং মহিলা কোয়েল পাখির বুকের পালক কালো বর্ণের ওপর বাদামী রঙের ছিটে দাগ থাকে।দেখতে অনেকটা ফুলের মত মনে হয়।তবে ২০ দিনের কম বয়সী কোয়েল পাখির পালক দেখে চেনা যায় না।কারণ ২০ থেকে ২৫ দিনে বুকের পালকের রঙ সবার একই থাকে।
ডাক শুনেঃসাধারণত পুরুষ কোয়েল পাখি গলার টান করে উচ্চস্বরে ডাকাডাকি করে।তবে কোয়েল পাখির বয়স ৩৫ দিনের বেশি হলেই এরা ডাকাডাকি করে।মহিলা কোয়েল পাখি সাধারণত চুপচাপ থাকে তেমন ডাকাডাকি করে না।
পায়ু পথ দেখেঃসাধারণত পুরুষ কোয়েল পাখির পায়ুপথ কিছুটা টিউমারের মত ফুলার মত লক্ষ্য করা যায়।সেখানে চাপ দিলে হালকা সাদা ফেনার মত বের হয়।মহিলা কোয়েল পাখির ক্ষেত্রে পায়ুপথে এমন লক্ষণ দেখা যায় না।তবে এ ক্ষেত্রে কোয়েল পাখির বয়স ৪০ থেকে ৪৫ দিন হতে হবে।
কোয়েল পাখির রোগ
কোয়েল পাখির বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে কোয়েল পাখির বাচ্চা পালন করতে গেলে কোয়েল পাখির রোগ সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত।কোয়েল পাখির রোগ সম্পর্কে আপনার ধারণা না থাকলে আপনি কোয়েল পাখি পালন করে লাভবান হতে পারবেন না।কোয়েল পাখির কিছু রোগের নাম যথা
- রক্ত আমাশয়
- ক্ষত সৃষ্টিকারী অস্ত্র প্রদাহ
- কৃমির আক্রমণ
- ক্লম্নালি প্রদাহ
- কলি সেফটিমিয়া
- রুডার নিমোমোনিয়া
- মারেক্স রোগ
- ক্যানিবালিজম
- কাল টো প্যারালাইসিস
পরামর্শ
কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে কোয়েল পাখির ব্যবসায় অনেক লাভজনক ফলাফল পাওয়া যায়।
- কোয়েল পাখির আবাসন সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
- অসুস্থ কোয়েল পাখিদের থেকে সুস্থ কোয়েল পাখিদের আলাদা করতে হবে।
- কোয়েল পাখির জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
- সর্বদা আলো বাতাস চলাচল করে এমন বাসস্থান নির্বাচন করে কোয়েল পাখি রাখতে হবে।
- পরিষ্কার এবং নিরাপদ জল সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- অসুস্থ অথবা মৃত কোয়েল পাখিকে পুড়িয়ে অথবা মাটির নিচে চাপা দিতে হবে।
- অপরিচিত ব্যক্তি বা খামারে নিয়োজিত কর্মী ব্যতীত খামারে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত নয়।কোয়েল পাখির আবাসন সবসময় পরিষ্কার এবং শুকনো রাখতে হবে।
পরিশেষে লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি কোয়েল পাখি পালন সম্পর্কে আপনাদের একটি স্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।আপনি কিভাবে কোয়েল পাখি পালন করবেন তা আশা করি ইতিমধ্যে জানতে পারছেন।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো সঠিক পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন করলে আপনি ব্যাপক ভাবে লাভবান হতে পারবেন।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন।তাহলে আপনার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে ও কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন।আপনার যদি কোন মতামত এবং প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।আর হ্যাঁ এমন আরো তথ্যমূলক কনটেন্ট পেতে নিয়মিত ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে ভুলবেন না।এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য।ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url