ছাগলের দুধের ১১টি কার্যকারী উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

ছাগলের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান।অনেক ওয়েবসাইটে খোঁজা খুঁজি করে ও সঠিক তথ্য পাননি।তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।আজকে ছাগলের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।


এছাড়াও আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন।বাচ্চাদের জন্য ছাগলের দুধের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় ছাগলের দুধ খাওয়া যাবে কিনা সে সম্পর্কে।এবং ছাগলের দুধের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।সুতরাং আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

বিস্তারিত শুরু করার পূর্বে সূচিপত্র দেখে নিনঃ

ছাগলের দুধের মৌলিক গঠন ( মান প্রতি ১০০ গ্রাম )


 
মৌলিক উপাদানের নাম পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রামে )
চর্বি ৩.৮
প্রোটিন ৩.৫
ল্যাকটোজ ৪.১
ছাই ০.৮
মোট কঠিন পদার্থ ১২.২
ক্যালরি ৭০

ছাগলের দুধের পুষ্টি গুণাগুণ

ছাগলের দুধে রয়েছে অধিক পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন যা আমাদের শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে।ছাগলের দুধে রয়েছে প্রোটিন,ক্যালোরি এবং ফ্যাটের বিভিন্ন উৎস।আমাদের শরীরের হাড়ের জন্য যে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন তার বেশির ভাগই ছাগলের দুধের মধ্যো রয়েছে।তাই ছাগলের দুধ যে কোনো বয়স্ক মানুষদের জন্য অনেক উপকারি হয়ে থাকে।

কারণ বয়স্ক মানুষের ক্যালসিয়াম বয়সের সাথে কমে যায়।নিয়মিত ছাগলের দুধ খেলে এরূপ সমস্যা থেকে অনায়াসে দূরে থাকা যাবে।কেউ যদি সারাদিনে এক গ্লাস ছাগলের দুধ পান করে তাহলে সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।সারাদিন যদি কোন পুষ্টিকর খাবার নাও খায় তাহলেও তার ভিটামিনের কোন অভাব হবে না।তাই এখন অনেক মানুষ গরুর দুধের বদলে ছাগলের দুধ খেয়ে থাকেন।

কারণ ছাগলের দুধে অধিক পুষ্টিগুণ রয়েছে।কারণ গরুর দুধের চেয়ে ছাগলের দুধে প্রতি কাপে প্রায় ১২ শতাংশ ল্যাকটোজ থাকে।যার কারনে আমাদের শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং এলার্জির সমস্যা হয় না।নিচে ছাগলের দুধের গঠন বিশ্লেষণ তালিকা দেওয়া হল।

ছাগলের দুধের গঠন বিশ্লেষণ  ( প্রতি ১০০ গ্রাম )

উপাদান ইউনিট প্রতি ১০০ গ্রামে
জল g ৮৮.৯
প্রোটিন g ৩.১
মোটা g ৩.৫
কার্বোহাইড্রেট g ৪.৪
শক্তি kcal ৬০
শক্তি kj ২৫৩
চিনি (ল্যাকটোজ ) g ৪.৪
কোলেস্টেরল মিলিগ্রাম ১০
ক্যালসিয়াম আইইউ ১০০
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড g ২.৪
মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসি g ১.১
পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড g ০.১

ছাগলের দুধের উপকারিতা

ইতিমধ্যে আপনাদের মাঝে ছাগলের দুধের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।সুতরাং আপনি বুঝতেই পারছেন ছাগলের দুধ খাওয়া আমাদের স্বার্থের জন্য কতটা উপকারী হতে পারে।ছাগলের দুধে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে।ছাগলের দুধে যে উপকারিতা রয়েছে গরুর দুধে সেসব উপকারিতা তেমন পাওয়া যায় না।চলুন তাহলে ছাগলে দুধের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।


ছাগলের দুধে এনার্জির প্রবণতা কমঃগরুর দুধের চাইতে ছাগলের দুধে এনার্জি প্রবণতা কম।গরুর দুধে এমন কি আছে যে এটির এত এলার্জি পূর্ণ?এর উত্তর লুকিয়ে আছে গরুর দুধের প্রোটিনে।গরুর দুধের প্রোটিনে লুকায়িত রয়েছে এলার্জির উপাদান।ছাগলের দুধে এ উন্নতির পরিমাণ গরুর দুধের তুলনায় শতকর ৮৯ ভাগ কম।সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে জানা গিয়েছে,শতকরা ৯৩ ভাগ শিশু ছাগলের দুধ খেতে পারে কোন রকম এলার্জি জনিত প্রক্রিয়া ছাড়াই।

ছাগলের দুধ হজম করা যায় সহজেইঃখাদ্য গ্রহণের পর যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আমাদের দেহ যাতে গ্রহণ কৃত খাদ্য সবচেয়ে দ্রুতদার সাথে হজম করতে পারে সে বিষয়টি খেয়াল রাখা।ছাগলে দুধের চর্বির দানা গরুর দুধের তুলনায় প্রায় অর্ধেক এবং এতে আছে উচ্চমাত্রায় মিডিয়াম শৃঙ্খলা ফ্যাটি এসিড এ ধরনের ফ্যাটি এসিড আমাদের জন্য ভালো।যা আমাদের খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে থাকে।


ছাগলের দুধ প্রাকৃতিকগতভাবে সমজাতীয়ঃএকটি পিনের মাথায় সমপরিমাণে ছিদ্র দিয়ে গরুর দুধ প্রবাহিত করা হয় উচ্চচাপে।এতে দুধের ফ্যাটের কোষীয় দেয়াল ধ্বংস হয়ে যায়।ফলে এ দেয়াল থেকে মারাত্মক ফ্রি-র্যাডিক্যাল নির্গত হতে থাকে।ছাগলের দুধ যেহেতু প্রাকৃতিকগতভাবে সমজাতীয় করা, অতএব এর জন্য এসব কঠোর প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রয়োজন নেই।আর এর ফলেই ছাগলের দুধের হজম ঘটে সহজেই।

বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ছাগলের দুধঃআমাদের শরীরের নানা ধরনের রোগ বালাই লেগে থাকে।তাই এ সকল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছাগলের কাঁচা দুধ আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী ও কার্যকরী।ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রক্তে ফ্লাটিলেটের সংখ্যা বৃদ্ধিতে এই ছাগলের দুধ বেশ সাহায্য করে। ছাগলের দুধে রয়েছে অ্যান্টিবডি ক্ষমতা যা আমাদের শরীরের অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও বেশ উপকারী। ছাগলের দুধকে জন্ডিস রোগের আরোগ্য লাভের প্রাকৃতিক উপাদান বলা হয়ে থাকে।

গরুর দুধের বিকল্প হিসেবেঃগরুর দুধের বিকল্প হিসেবে আপনি ছাগলের দুধ গ্রহণ করতে পারেন।কারণ ছাগলে দুধে রয়েছে এমন কিছু যৌগ উপাদান রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের  উন্নতিতে এটি বেশ কার্যকরী।বিভিন্ন খাবার থেকে যে পুষ্টি উপাদান শোষণ করার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তোলে ছাগলের দুধ।তাই ছাগলের দুধ আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।

শিশুদের জন্য উপকারীঃছাগলের দুধে প্রোটিন,স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।এছাড়াও ছাগলের দুধে রয়েছে উচ্চ তাপমাত্রায় ক্যালসিয়াম যা শিশুদের দাঁত ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে এবং শিশুদের দেহের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি যোগায়।সুতরাং শিশুদের জন্য ছাগলের দুধ বেশ উপকারী।

এছাড়াও ছাগলে দূরে আরও যেসব উপকারিতা রয়েছে সেগুলো কি কি তা জেনে নিন
  • ছাগলের দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড় মজবুত করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, আপনার যদি হার্ট জনিত কোন রোগ অথবা দুর্বল তাহলে আপনি ছাগলের দুধ খেতে পারেন।এতে আপনার হার্ট এবং দাঁতের ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি পাবে এবং মজবুত হবে।
  • যে সকল শিশু মায়ের বুকের দুধ পায় না ওই সকল শিশুদের ছাগলের দুধ খাওয়াইতে পারেন।কারণ মায়ের দুধের বিকল্প হলো ছাগলের দুধ।তাই যদি শিশু বা নবজাতক শিশু দুধ না পায় তাহলে অবশ্যই ছাগলের দুধ খাওয়াইতে পারেন।তবে শিশু বা নবজাতক শিশুকে ছাগলের দুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াবেন।
  • আপনার যদি এলার্জির জনিত সমস্যা থাকার কারণে আপনি গরুর দুধ খেতে পারছেন না।তাহলে গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে আপনি ছাগলের দুধ খেতে পারেন।সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ছাগলের দুধে তেমন কোন এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ছাগলের দুধ।আমরা জানি যে গরুর দুধের থেকে ছাগলের দুধ কম হয়ে থাকে।কিন্তু গরুর দুধের থেকে ছাগলের দুধের উপকারিতা অনেক তাই আপনার যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাহলে আপনি নিয়মিত ছাগলের দুধ খেতে পারেন।এতে আপনি ভালো উপকার পাবেন।
  • আপনার শরীর যদি অনেক দুর্বল হয়ে থাকে অথবা আপনি রক্তশূন্যতায় ভুগছেন।তাহলে আপনি নিয়মিত ছাগলের দুধ খেতে পারেন।এতে আপনার শরীরে দুর্বলতা এবং রক্তশূন্যতা কেটে যাবে।

শিশুদের জন্য ছাগলের দুধের উপকারিতা

আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন শিশুদের শরীরের জন্য ছাগলের দুধ কতটা উপকারী এ বিষয়ে জানেন না।বিশেষজ্ঞ  ডাক্তারদের মতে,ছাগলের দুধে যে পুষ্টিগুণ রয়েছে তা মায়ের বুকের দুধের পুষ্টিগুণের প্রায় সমান।কারণ ছাগলের দুধে রয়েছে,প্রোটিন,ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সমূহ যা শিশুর হাড় ও দাঁত মজবুত করে এবং শিশুর শরীরে শক্তি যোগায় এবং পুষ্টি যোগায়।



যখন শিশু এবং ছোট বাচ্চারা যে কোনো ধরনের দুধ পান করে,তখন প্রোটিনের উপর পাকস্থলীর এসিডের ক্রিয়া দ্বারা তাদের পাকস্থলীতে প্রোটিন ক্ল্যাম্প দই তৈরি হয়।এই দই যত নরম এবং ছোট (প্রোটিন ক্ল্যাম্প) যত বেশি হজম যোগ্য এবং দ্রুত পেটের মধ্য দিয়ে যাবে।ছাগলের দুধের প্রোটিন গরুর দুধের তুলনায় ছোট এবং খুব নরম দই তৈরি করে।যা সহজে হজম করে এবং ফলস্বরূপ হজমের সমস্যা হয় না।

আমরা জানি যে বাচ্চাদের জন্য আদর্শ দুধের ক্ষেত্রে স্তন সবচেয়ে ভালো,কিন্তু যখন এটি তার আর সম্ভব হয় না তখন ছাগলে দুধের ফর্মুলার কিছু বাচ্চাদের জন্য ঐতিহ্যগত গাভীর দুধ ফর্মুলার চেয়ে ভালো হতে পারে।এছাড়াও ১২ মাসের কম বয়সে বাচ্চাদের যারা গরুর দুধ ভিত্তিক ফর্মুলা,সয়া ফর্মুলা বা হাইপ্রোঅ্যালার্জেনিক ফর্মুলাতে এলার্জি আছে তাদের মাঝে ছাগলের দুধের ফর্মুলা দেওয়া হয়।তবে শুধুমাত্র শিশু ডাক্তার বা শিশু পুষ্টি দেয় বিদদের পরামর্শ।


ছাগলের দুধের প্রধান উপাদান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সূত্র রয়েছে।এগুলোতে সাধারণত সমস্ত প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ যুক্ত থাকে এবং ছাগলের দুধের প্রাকৃতিক হজম ক্ষমতাকে আরো সমর্থন করার জন্য সামঞ্জস্য করা হয়েছে।তবে ফর্মুলা রেসিপির ওপর নির্ভর করে এটা সম্ভব হয় যে আপনি আপনার ছোট বাচ্চার খাদ্যের সাথে ফলিক এসিড, ভিটামিন,বি-১২, এবং সম্ভবত আয়রন যোগ করতে হবে।যাতে তারা প্রতিটি খাবারের পুষ্টির সঠিক ভারসাম্য পায়।

গরুর দুধ এবং ছাগলের দুধে চিনির ল্যাকটোজ থাকে,তবে ছাগলের দুধের সামান্য কম থাকে।তবে এটা সম্ভব যে ল্যাকটোজ শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য একটি সামান্য সুবিধা।যাই হোক মনে রাখবেন যে,ছাগলের দুধ এবং গরুর দুধ উভয় ল্যাকটোজ ধারণ করে।সুতরাং ল্যাকটোজ ও সহনশীলতা সহজ শিশু এবং ছোট বাচ্চারা উভয় ধরনের দুধ পরিচালনা করতে সক্ষম না ও হতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এবং ভ্রূণের জন্য ছাগলে দুধের উপকারিতা 

আপনি যদি গর্ভবতী মহিলা হয়ে থাকেন অথবা আপনার স্ত্রী অথবা আপনার পরিবারের কেউ তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটুকু দেখা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরী।এখন গর্ভাবস্থায় ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো।আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন।না চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নিন।
  • ছাগলে দুধের সাথে গর্ভবতী মহিলাকে মাতাল করার ভ্রূণের ভবিষ্যতের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে বিশেষত জন্ম প্রক্রিয়ার পরে,যা কৈশোর বয়সে প্রতিফলিত হয় তার জন্য লাভবান করে।
  • মা এবং তার ভ্রূণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সরবরাহ করে এবং মা এবং ভ্রূণের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • ছাগলের দুধ গর্ভাবস্থায় এবং তার বাইরেও মহিলাদের পেশী বৃদ্ধি ধারা উৎপাদিত প্রোটিনের ক্ষতিপূরণ করতে সাহায্য করে।
  • গর্ভাবস্থায় মাসে তার ভ্রূণের হাড়ের বৃদ্ধি হওয়ায় মায়ের মধ্যে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে।
  • ছাগলের দুধ মা এবং ভ্রূণের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করে,যা জন্মের পর ভ্রূণকে রিকেট থেকে রক্ষা করে।
  • ভ্রূণের রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে এটি বৃদ্ধি পায়।
  • গর্ভবতী এবং ভ্রূণ মহিলাদের ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করে ।
  • বাচ্চা-মায়ের গর্ভে থাকাকালীন মনকে বৃদ্ধি এবং পুষ্ট করতে সহায়তা করে।

ত্বকের যত্নে ছাগলে দুধের উপকারিতা

ছাগলের দুধ শুধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নয়,আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী ছাগলের দুধ।আমাদের স্বার্থের পাশাপাশি রূপচর্চায় ছাগলের দুধ বেশ অতুলনীয়।আপনি প্রাকৃতিক ভাবে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ছাগলের দুধ ব্যবহার করতে পারেন।ত্বকের যত্নে আপনি ফেসপ্যাক অথবা ত্বকের ফেস ক্লিনজার হিসেবে ছাগলের দুধ ব্যবহার করতে পারেন।


এটি ত্বক সতেজ ও ত্বকের বলি রেখা দূর করতে সহায়তা করে।অনেকেই ছাগলের দুধের স্বাস্থ্যের উপকারিতা সম্পর্কে শুনেছেন বা পড়েছেন।কিন্তু ত্বকের  ছাগলের দুধ কতটা উপকারী আপনি তা শুনে অবাক হবেন।আসুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেই ত্বকের যত্নে ছাগলে দুধের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।

ত্বক নরম হয়ঃআপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয়ে থাকে অথবা ত্বকে আর্দ্রতা ভাব থাকে না।সেজন্য আমাদের ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর রাখতে ছাগলের দুধ অতুলনীয়।যা বহু বছর ধরে এর ব্যবহৃত হয়ে আসছে।ছাগলের দুধ আমাদের ত্বকে কয়েক মিনিট ধরে রাখলে এটি খুব ভালো কাজ করে।ছাগলের দুধ ত্বকে লাগালে আমাদের ত্বক চকচকে নরম ও সতেজ হয়ে উঠবে।


কারণ ছাগলের দুধে রয়েছে ল্যাকটিক এসিড ও ফ্যাটি অ্যাসিড।ছাগলের দুধ পরীক্ষণ এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা জানান যে,ছাগলের দুধের সব থেকে বড় সুবিধা জনক হলো ছাগলের দুধে পিএইচ রয়েছে।যার কারণে ছাগলের দুধ আমাদের ত্বককে লাগালে ত্বকের মাইক্রোবায়োমের ক্ষতি হয় না।ছাগলের দুধের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন,ফ্যাট,প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধের মিশ্রণ।যা সব ত্বকের জন্য সমান ভাবে রূপচর্চার কাজে লাগে।

প্রোবায়োটিক এবং ভিটামিনের পরিপূর্ণঃসাম্প্রতিক এক গবেষণার মাধ্যমে ত্বক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে,আপনি ছাগলের দুধ ত্বকে লাগালে আপনার ত্বকের মেরামতের গতি বেড়ে যায়।অর্থাৎ ক্ষতিকারক ফ্রি-র‍্যাডিক্যালগুলি আমাদের ত্বকের যে ক্ষতি হয়েছে তা দ্রুত সেরে ওঠে।ছাগলের দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়।

ত্বক বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে,ভিটামিন ত্বকের প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েশনে সহায়তা করে।তাছাড়াও স্ক্রাবের মাধ্যমে ত্বকের মৃত কোষগুলি সরিয়ে ফেলে এর ফলে পরিষ্কার এবং ঝলমলে ত্বক ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে।

ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসাবেঃছাগলের দুধ ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা অতি উত্তম একটি উপাদান।ছাগলের দুধে রয়েছে হিউমেকট্যান্ট,যা পরিবেশ থেকে আদ্রতা টেনে নিয়ে আমাদের ত্বকের জেল্লা ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে।তাছাড়াও ছাগলে দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ল্যাকটিক এসিডের উচ্চ পরিমাণের ঘনত্ব।

যা আমাদের স্কিন কেয়ার এর জন্য অন্যতম উপকরণ।ছাগলের দুধে থাকা ল্যাকটিক এসিডের কারণে আলফা-হাইড্রক্সি এসিড রয়েছে যা ত্বকের মৃত কোষকে অপসারণ করতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা,মসৃণ ও কোমল ভাব ধরে রাখতে ছাগলে দুধের কোন ও বিকল্প নেই।

সিরামাইড রোলঃঅনেক সময় দেখা যায় ত্বকের কোষ গুলির মধ্যে সিরামাইডের পরিমাণ ভালো থাকে।এতে আমাদের ত্বক আরো স্বাস্থ্যকর এবং দৃষ্টিনন্দন দেখায়।কারণ ছাগলে দুধে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা ত্বকে প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্ট হিসেবে কাজ করে থাকে।যার ফলে এটি আমাদের ত্বকের আদ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ত্বকের নানান সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করেঃরুক্ষ,শুষ্ক ত্বকের যাদুকরীর মত কাজ করে ছাগলের দুধ।এতে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড,অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল,অ্যান্টিফাঙ্গাল,অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরির বৈশিষ্ট্য।যা ত্বকের জালা ভাব,চুলকানি ও ত্বকের নানান সমস্যা হ্রাস প্রতি সাহায্য করে।

ছাগলের দুধ খাওয়ার অপকারিতা

যে কোনো জিনিসের উপকারিতা থাকলে তার অপকারিতা রয়েছে।কথায় আছে,কোন কিছুই বেশি মাত্রায় খাওয়ার ফলে সেটি আমাদের স্বাস্থ্যের উপকারের থেকে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অপকার দেখা দেওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।তেমনি ছাগলের দুধ এটি যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন তাহলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।যেমন,
  • আপনার যদি প্রচুর পরিমাণে এলার্জির জনিত সমস্যা রয়েছে তাহলে ছাগলের দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।এবং যদি খেতে হয় তবে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন।
  • ছাগলের দুধ পরীক্ষণ এর মাধ্যমে জানা যায়,ছাগলের দুধে একটি ভাইরাস বা ছত্রাক থাকে।তার নাম হলো কম্বুজা।ছাগলের দুধ ভালো ভাবে না ফুটিয়ে খাবার ফলে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।যার ফলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ছাগলের দুধে গর্ভবতী বা স্তন দানকারী মহিলার ক্ষেত্রে তেমন কোন তথ্য নেই।সুতরাং যদি খেতে হয় তাহলে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন।
  • আপনি যদি অসুস্থ বোধ করেন তাহলে ছাগলের দুধ পরিহার করতে হবে।তাছাড়াও আপনার যদি ডায়রিয়া জনিত কোন সমস্যা থাকে তাহলে ছাগলের দুধ পরিহার করা আপনার জন্য উত্তম।

ছাগলের দুধ খাওয়ার নিয়ম

আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন ছাগলের দুধ খেতে পছন্দ করেন।কিন্তু ছাগলের দুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানেন না।ছাগলের দুধ খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে।আপনি যদি এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করে ছাগলের দুধ খান।তাহলে তেমন কোন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না। চলুন তাহলে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ছাগলের দুধ খাওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নেই।
  • প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছাগলের দুধ খাওয়ার নিয়ম হলো এক পোয়া থেকে হাফ কেজি।অর্থাৎ ২৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম খাওয়া যেতে পারে।প্রতিদিন দিনে দুইবার ছাগলের দুধ খেতে পারেন।তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন না।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে ছাগলের দুধ খাওয়া একটু ভিন্ন যেমন ০৫ বছরের শিশুদের জন্য ১৫০ গ্রাম এবং ১০ বছরের শিশুর জন্য ২০০ গ্রাম করে দিনে একবার খাওয়াতে পারেন।

ছাগলে দুধের দাম

ছাগলের দুধ গরুর দুধের চেয়ে বেশি দাম হয়ে।বর্তমানে বাজারে ছাগলের দুধ প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।ছাগলে দুধে অধিক পুষ্টি গুণের জন্য মানুষ গরুর দুধের বদলে ছাগলের দুধ খাচ্ছে।এতে কোন এলার্জির সমস্যা অথবা গ্যাস্টিকের সমস্যা হচ্ছে না।এছাড়াও বাজারে ছাগলের গুড়া দুধ পাউডার দুই থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

কারণ ছাগলের দুধ অনেক ঘন হওয়ায় যে কোনো মিষ্টি খাবারে এই গুড়া দুধ দিলে খাবারের টেস্ট অনেক বেড়ে যায়।এছাড়াও এখন বাচ্চা হওয়ার পর যদি বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ না পায়।তাহলে এই ছাগলের দুধ অথবা পাউডার দুধ কিনে খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।ছাগলে দুধের মধ্যে কিছুটা মায়ের দুধের গুনাগুন রয়েছে যা বাচ্চাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।

গরুর দুধ খাওয়ালে বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট অথবা নিউমোনিয়া এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।তাই দিন দিন ছাগলে দুধের দাম বেড়ে যাচ্ছে।এছাড়াও মানুষ রূপচর্চার কাজে ও ছাগলের দুধ ব্যবহার করছে।কারণ ত্বকের জন্য এই ছাগলের দুধ অনেক উপকারী।যা ত্বককে সুন্দর ও মসূন কোমল রাখতে ছাগলের দুধের গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রতিরোধমূলক এবং থেরাপিউটিক ছাগলের দুধের উপকারিতা

ইতিমধ্যে আপনাদের মাঝে ছাগলের দুধ খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আর্টিকেলের এই অংশে থেরাপিউটিক ছাগলে দুধের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
  • ছাগলে দুধে ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম রয়েছে।যা মানুষের হাড়কে তাদের ভঙ্গুরতা থেকে রক্ষা করে।
  • ছাগলে দুধে ফ্যাটি এসিড থাকার কারণে আমাদের শরীরে অ্যালার্জির সুরক্ষা দেয়।
  • বদহজমকে নিরাময় করে এবং পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
  • ত্বকের মৃত ত্বকের কোষ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
  • প্রথম দিকে বার্ধকে এবং এর লক্ষণ গুলি থেকে রক্ষা করে।
  • ত্বককে বিশেষত শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজার করে সহায়তা করে।
  • ত্বককে ফাটল এবং একজিমা থেকে রক্ষা করে।
  • রোদে পোড়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
  • রোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের এবং অখন্ডতা বজায় রাখে।
  • বাচ্চা দের কিছু সংবেদনশীলতা সহায়তা করে।
  • শিশু এবং পূর্ণবয়স্কদের সম্পূর্ণ পুষ্টিক যৌগ গুলিতে সহায়তা করে।

পরিশেষে লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ে আশা করি ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা,শিশু ও বাচ্চাদের জন্য ছাগলের দুধের উপকারিতা,ত্বকের যত্নে ছাগলের দুধের উপকারিতা এবং এবং অতিরিক্ত ছাগলের দুধ খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে আপনাদের একটি স্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।

সুতরাং আর্টিকেলটি পড়ে আপনার মনে কোন সংশয় থাকবে না।যে ছাগলের দুধ আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নিরামিষ্ট কিনা সেই সম্পর্কে।তবে অবশ্যই ছাগলে দুধ খাওয়ার পূর্বে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন এবং আপনার বাচ্চাকে খাওয়ানো যাবে কিনা ডাক্তারের থেকে জেনে নিবেন।

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন।তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে।তাদের ও জানার সুযোগ করে দিবেন।এবং আপনি আপনার মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন।এমন আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে সাথেই থাকুন।ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url