করমচা ফল খাওয়ার ১৫টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন

করমচা ফল খাওয়ার কথা ভাবছেন?অনেক ওয়েবসাইটে খোঁজাখুঁজি পরেও সঠিক তথ্য পাননি।তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন।আজকে আপনাদের মাঝে করমচা খাওয়ার উপকারিতা সহ করমচা ফলের বিভিন্ন ট্রাফিক সম্পর্কে আলোচনা করব।


এছাড়াও গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার উপকারিতা ও করমচা খাবার নিয়ম এবং করমচা আচার রেসিপি সম্পর্কে আপনাদের মাঝে বিস্তারিত আলোচনা করব।সুতরাং আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

বিস্তারিত শুরু করার পূর্বে সূচিপত্র দেখে নিনঃ

করমচা ফল গাছ চেনার উপায়

আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন করমচা ফল গাছ চিনেন না।আর এই করমচা ফল গাছ না চেনার কারণে বর্তমান প্রজন্ম এ ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানে না।গাছটি এক ধরনের শক্ত কাঁটাওয়ালা ঝোপঝাড়  প্রকৃতির।চিরসবুজ করমচা উদ্ভিদটি প্রায় ২.৫-৩.০ মিটার লম্বা হয়ে থাকে।কাঁচা করমচা ফলের রঙ গাড় সবুজ এবং পাকলে লাল হয় এবং শেষমেষে লালচে হয়ে যায়।


বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের করমচা দেখতে পাওয়া যায়।এসব কোনো টার ফলের রং সাদা কোন টার ফলের রঙ সাদার মধ্যে গোলাপি আভা লক্ষ্য করা যায়।আবার কোনটির রং টকটকে লাল হয়ে থাকে।তাছাড়াও কোন কোন জাতির ফলের গায়ের খয়েরী দাগ থাকে।করমচা ফল গাছ চেনার আরেকটি উপায় রয়েছে তা হল করমচা গাছের ডাল,পাতা অথবা ফল ছিঁড়লে সাদা দুধের মত কষ বের হয়।

করমচার পুষ্টিগুণ

উপাদানের নাম প্রতি ১০০ গ্রামে পুষ্টির পরিমাণ
শক্তি ৬২ কিলোক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট ১৪ গ্রাম
প্রোটিন ০.৫ গ্রাম
ভিটামিন এ ৩৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ৩৪ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন ০.১ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম
আয়রন ১.৩ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ২৬০ মিলিগ্রাম
কপার ০.২ মিলিগ্রাম


করমচা ফল খাওয়ার উপকারিতা 

ইতিমধ্যে আপনারা জানতে পারছেন করমচা এর বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।সুতরাং আপনি বুঝতে পারছেন যে ফলের মাঝে এত পুষ্টিগুণ রয়েছে তার উপকারিতা নিশ্চয়ই রয়েছে।করমচা আমাদের অনেকের কাছে একটি অপরিচিত ফল।করমচা ফল অপরিচিত হলেও এর উপকারিতা অনেক।


সাধারণত করমচা ফল শহরে কিংবা গ্রামের বাজারে দেখা যায়।করমচা ফলটি অপরিচিত হওয়ার কারণে এর উপকারিতা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে থাকি অনেকেই।চলুন তাহলে দেরি না করে করমচা ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই ।

  • আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যাদের দাঁতে পোকা লাগার সমস্যা রয়েছে অথবা দাঁতের মাড়ি ব্যথা করে।এ সকল সমস্যার সমাধানে কাঁচা করমচা খেতে পারেন ভালো উপকার পাবেন।
  • আপনার যদি খাবারের রুচি একেবারেই কম থাকে।তাহলে আপনি নিয়মিত করমচা খাওয়ার অভ্যাস করুন।এতে আপনার খাবারের রুচি অনেক বৃদ্ধি পাবে।
  • আপনি আপনার অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য অনেক রকমের ফল বা ডায়েট করে থাকেন।কিন্তু আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না তাহলে আপনি নিয়মিত করমচা খেতে পারেন।করমচা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত করমচা খাওয়ার ফলে হূদরোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।এছাড়াও করমচা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে।
  • করমচা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে।এছাড়াও এর সঙ্গে রয়েছে ট্রাইটোফোন নামক একটি উপাদান যা আমাদের স্নায়ুর উন্নতি করতে সাহায্য করে।অর্থাৎ করমচা শুধু শারীরিক ভাবেই উপকারী নয় বরং মানসিক ভাবেও আমাদের অনেক উপকার করে থাকে।করমচা খেলে সেরোটোনিন নামক হরমোনের ক্ষরণ কমে যা আমাদের মানসিকভাবে সুস্থ এবং আমাদের মনকে প্রফুল্ল রাখে।
  • আমাদের শরীরের মধ্যে অনেক সময় অনেক রকমের প্রদাহ তৈরি হয় যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।করমচা শরীরের ক্ষতিকর প্রদাহ কমাতে এবং নতুন নতুন প্রদাহ তৈরি করতে ও বাধা প্রদান করে থাকে।এছাড়াও কোন কারনে চোট বা আঘাত পেলে সেই ব্যথা দূর করতেও সাহায্য করমচা।
  • করমচা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম রয়েছে যা আমাদের শারীরিক ক্লান্তি ভাব দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
  • এছাড়াও করমচাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এর পাশাপাশি ভিটামিন এ পাওয়া যায়।যা আমাদের চোখের সমস্যা দূর করতে এবং আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • করমচাতে রয়েছে প্রোটিন নামক একটি উপাদান।যা সব ধরনের ফলে পাওয়া যায় না।পেটের নানা সমস্যা দূর করতে এই উপাদান দারুন কার্যকরী।এছাড়াও করমচা হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।
  • আপনার যদি লিভার ও কিডনি জনিত সমস্যা থাকে তাহলে আপনার নিয়মিত করমচা খাওয়া উচিত। কারণ করমচা তে থাকে কপার।যা কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে এবং এই উপাদানটি লিভার ও কিডনির ক্ষতকে সারিয়ে তুলে।
  • আপনি যদি কষ্টকাঠিন্য রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে কষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে পারে করমচা।কারণ করমচাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়।তাই করমচা খেলে খুব সহজে পেট পরিষ্কার হয়।সুতরাং নিয়মিত করমচা খেলে কষ্টকাঠিন্য দূর হতে সময় লাগে না।তাই আপনি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় করমচা রাখতে পারেন।
  • আপনি যদি দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগেন তাহলে আপনি প্রতিদিন দুই থেকে চারটি করে করমচা ফল খেতে পারেন।এতে করে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ কমাতে সাহায্য করে।যকূত প্রতিরোধে আছে বিশেষ ভূমিকা।আপনার যদি মৌসুমী সর্দি,জ্বর,কাশি হয়ে থাকে।তাহলে আপনি করমচা খেতে পারেন।এছাড়াও করমচা কূমিনাশক ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
  • আপনি আপনার ত্বকের সুরক্ষায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত করমচা খেতে পারেন।
  • জ্বর ডায়রিয়া এবং আমাশয় রোগীদের জন্য করমচা অনেক উপকারী।
সুতরাং আপনি যদি এসব উপকারিতা গুলো পেতে চান তাহলে আপনি নিয়ম অনুসারে করমচা খেতে পারেন।এতে আপনি অনেক রকমের রোগ থেকে নিরাপদে থাকবেন এবং আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। 

গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার উপকারিতা

আপনি যদি একজন গর্ভবতী মহিলা হয়ে থাকেন অথবা আপনার স্ত্রী অথবা আপনার পরিবারের কেউ, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলের অংশটুকু দেখা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরী।এখন গর্ভাবস্থায় করমচা ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো।আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না।চলুন তাহলে জেনে নেয় গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।


একজন গর্ভবতী মহিলা কতটুকু খাবার খেতে হবে তা একটু চিন্তার বিষয়।এসময় সব খাবার খাওয়ার খুব বেশি ইচ্ছে জাগে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।তাই এসময় নিজেকে ক্ষতিকর খাবার গুলো থেকে বিরত রাখতে হবে।কেননা গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে মা ও গর্ভে থাকা শিশু সুস্থ থাকে।


গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীদের শরীরে অনেক রকমের সমস্যা দেখা দেয় যার কারণে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিনের প্রয়োজন হয়।করমচা এর মধ্যে এমন কিছু ভিটামিন রয়েছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় একজন নারীর জন্য অনেক উপকারী ।

  • করমচা তে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।এজন্য গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার পরে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় এবং অনেক রোগ থেকে নিরাপদে থাকা যায়।
  • আপনি জেনে অবাক হবেন,করমচার সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় প্রতিটি নারীর খাবারের প্রতি  রুচি আসে না।এজন্য গর্ভাবস্থায় করমচা খাবার অভ্যাস করলে খাবারের রুচি বৃদ্ধি পাবে।যা একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য অনেক বেশি জরুরী।
  • করমচা খাওয়ার ফলে চোখের যেসব সমস্যা হয় যেমন ঝাপসা দেখা।দূরের কোন কিছু ঠিকভাবে দেখতে না পাওয়া।এসব সমস্যা গুলি ভালো হয়ে যায় এবং গর্ভে থাকা শিশু বাচ্চার দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • গর্ভাবস্থায় অনেকের শরীর কিছুদিন পর পর জ্বর জ্বর ভাব হয়ে থাকে।যার কারণে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়।করমচা শরীরের এই জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থায় শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে থাকে।
  • করমচা গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখতে পারে যার কারণে শরীরে রক্তের মাত্রা পর্যাপ্ত থাকে। ফলে বাচ্চা হওয়ার সময় কোন রকম রক্তের সমস্যা হয় না।
  • করমচা খাওয়ার ফলে শরীরের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ক্ষতিকারকতা থেকে রক্ষা করে।যার কারণে শরীরের অসুস্থতা হয় না এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া গর্ভবতী মহিলার শরীর থেকে বের হয়ে আসে।
  • তেতুল খাওয়ার পরবর্তীতে করমচা খাওয়া উচিত কারণ তেতুলে অনেক সময় শরীরের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।এক্ষেত্রে করমচা খাওয়া উত্তম।
সুতরাং উপরিক্ত উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য অবশ্যই গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক নারীর করমচা খাওয়া উচিত।এতে করে গর্ভবতী মহিলা ও গর্ভে থাকা শিশু অনেক বেশি সুস্থ থাকবে এবং শিশুর শারীরিক গঠন অন্য সকল শিশুদের থেকে অনেক উন্নত হবে।

করমচা ফল খাওয়ার নিয়ম

কারণ খাওয়ার নিয়ম অথবা করমচা ফল কিভাবে খায় তা নিয়ে আপনি কি ভীষণ চিন্তিত?আর্টিকেলের এই অংশে করমচা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।করমচা একটি টক জাতীয় ফল যা আপনি এমনিতেই খেতে পারেন।করমচা খাবার ফলে আপনার মুখের রুচি ফিরে আসবে এছাড়াও করমচার আচার বেশ বিখ্যাত।

সাধারণত আমরা আমের আচার অথবা তেতুলের আচার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে খেয়ে থাকি।এ সকল আচারের পাশাপাশি আপনি করমচার আচার করে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করে খেতে পারবেন। বিশেষ করে খিচুড়ির সাথে করমচার আচারের কোন তুলনা হয়না।যা এক কথায় অতুলনীয় স্বাদ দেয় আপনাকে।

করমচা ফল সিদ্ধ করে ভর্তা করার মাধ্যমেও আপনি খেতে পারেন।এভাবে ভর্তা করে খাওয়ার পরে দেখবেন খুব সহজে আপনি দুই থেকে তিন প্লেট খাবার খেতে পারছেন।করমচা পাকা কাঁচা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়।করমচা বিট লবণ লেবুর রস একসাথে শরবত করে খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি আমাদের শরীরের নিয়ে আসে রিফ্রেশ।

যা আমাদের শরীরে ক্লান্তি দূর করে আমাদের কার্যক্ষমতা কে আরো বাড়িয়ে দেয।সবজির রান্নার সাথে করমচা দিয়েও রান্না করে খেতে পারেন।এছাড়াও করমচার মোরব্বা খেতে অনেক সুস্বাদু এবং আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।সুতরাং করমচা থেকে এমন উপকৃত পাওয়া যায় যা আপনার কল্পনার বাহিরের।এজন্য চেষ্টা করবেন এসব নিয়ম মেনে করমচা খেতে তাহলে আপনি উপকৃত হবেন।

করমচা ফল খাওয়ার অপকারিতা

করমচা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।করমচার মৌসুমী করমচা খাওয়া আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত।তবে করমচা খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া না হয়ে যায়।কথায় আছে অতিরিক্ত যে কোন কিছুই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।


অতিরিক্ত করমচা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের জন্য এবং পেটের সমস্যা জনিত অনেক সমস্যা  হতে পারে।হজম শক্তির সমস্যা ডায়রিয়া,পেট খারাপ,পেটব্যথা কষ্টকাঠিন্য এরকম যাবতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।এর জন্য আপনাকে অবশ্যই যে কোন খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।শুধু করমচা নয় বরং করমচার আচার খাওয়ার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

অতিরিক্ত পরিমাণ আচার খাওয়ার কারণে আপনার গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।এছাড়াও আরো বিভিন্ন রকম সমস্যা শরীরে দেখা দিতে পারে।এজন্য অবশ্যই সীমিত পরিমানে এবং নিয়ম অনুসারে করমচা খাবেন।তাহলে উপরিক্ত যে সকল উপকারিতা রয়েছে তা সবগুলোই পরিপূর্ণভাবে পাবেন।

করমচা চাষ পদ্ধতি

ইতিমধ্যে আপনাদের মাঝে করমচা খাওয়ার উপকারিতা,অপকারিতা এবং করমচা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের মাঝে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আর্টিকেলের এই অংশে করমচা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।

ভূমি নির্বাচনঃকরমচা একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। করমচাবাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতে চাষ করা যায়। করমচা গাছটি কাঁটাযুক্ত এবং এর ফলগুলো ছোট গোলাকার এবং লালচে রঙের হয়ে থাকে।করমচা চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো।এক্ষেত্রে মাটির পিএইচ মান ৬.০ থেকে ৭.০ এর মধ্যে হলে ভালো হয়।

জমি তৈরি করণঃকরমচা চাষের জন্য অবশ্যই জমি তৈরি সম্পর্কে আপনার একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত।জমি ভালোভাবে চাষ করে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ানোর জন্য করমচা চাষের জমি তৈরীর সময় আপনি গোবর অথবা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে পারেন।

চারা রোপনঃকরমচা চারা রোপনের জন্য ভালো জাতের ফলের গাছ থেকে কলম বা বীজ সংগ্রহ করতে হবে।কলম রোপনের জন্য এক থেকে দুই বছর বয়সী কলম ব্যবহার করা উত্তম।বীজ থেকে চারা রোপনের ক্ষেত্রে ফল পাওয়ার জন্য ০৫থেকে ০৬ বছর অপেক্ষা করা লাগতে পারে।করমচা গাছের মধ্যে ৫থেকে ৬ মিটার এবং সারি  থেকে সারির মধ্যে ৬ থেকে ৭ মিটার দূরত্ব রাখতে হবে।

সার প্রয়োগঃকরমচা গাছের জন্য গোবর বা কম্পোস্ট সার ইউরিয়া,টিএসপি এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে পারেন এতে ভালো ফলন পাবেন।

সেচঃকরমচা গাছের জন্য নিয়মিত সেচ দিতে হবে বিশেষ করে গাছের ফুল আসার সময় এবং ফল ধরার সময় বেশি সেচের প্রয়োজন হয়।এ সময় সেচ না দিলে ফলনের ক্ষতি হতে পার।

আগাছা দমনঃকরমচা গাছের চারপাশের আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে।যা গাছের পাতা ও ফলের পোকা মাকড়ের আক্রমণ হতে পারে।এর ফলে করমচা গাছের কিছু রোগ বালাই হতে পারে এ সকল পোকা মাকড় এবং রোগ বালাই দমনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফল সংগ্রহঃকরমচা ফলের মৌসুম মে থেকে জুলাই পর্যন্ত হয়ে থাকে।এ সময় করমচা ফল পেকে যায়। পাকা করমচা ফল লালচে রঙের হয়ে থাকে।একটি করমচা গাছ থেকে প্রতি বছর ১২ থেকে ২০ কেজি ফল পাওয়া সম্ভব।

করমচার চেরি এবং আচার তৈরির রেসিপি

করমচা থেকে এক বিশেষ পদ্ধতিতে চেরি বানানো যায়।বর্তমান বাজারে চেরির ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়।যা অনেকের কিনার সাধ্যের বাহিরে।সুতরাং আপনি যদি বাসায় চেরি বানাতে চান সেক্ষেত্রে যে সকল ধারা গুলো অনুসরণ করতে হবে তা হচ্ছে প্রথমে করমচা সংগ্রহ করে ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

এরপর করমচার মাথায় যে বোটা রয়েছে তা ছেড়ে ফেলবেন।এভাবে প্রতিটি করমচা থেকে বোটা ছিড়ে ফেলে দিবেন।বোঁটা ছেড়া হয়ে গেলে আবার সেগুলোকে ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন।এরপর পরিষ্কার কূত করমচা একটি ছুরির সাহায্যে চির নিবেন।তারপর একটি কড়াইয়ে করমচা নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো চিনি দিবেন।

এক কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে দিবেন তারপর কিছু সময় ধরে নাড়াতে থাকবেন।আপনি সিরা তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনাকে চিনির স্রিরা করতে হবে যখন চিনি গুলো আঠালো হয়ে যাবে।তখন তার মধ্যে সবগুলো করমচা দিয়ে দিবেন এবং কিছু সময় নাড়াচাড়া করবেন।আরো আকর্ষণীয় করার জন্য সেখানে লাল ফুড কালার ব্যবহার করতে পারেন।

ফুড কালার দেওয়ার পর কয়েক সেকেন্ড নাড়াচাড়া করবেন তারপর ঢাকনা দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ঢেকে দিবেন।এরপর কড়ায় থেকে নামিয়ে একটি বাটিতে বা পাত্রে একদিনের জন্য ঢেকে রাখবেন। একদিন পর ছাঁকনির সাহায্যে চিনির সিরা থেকে করমচা গুলো ছেঁকে নিবেন।তাহলে এই করমচা  থেকে চেরি তৈরি হয়ে যাবে এটি খেতে অনেক বেশি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।

করমচার আচার অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং এই আচার খেতে অনেক বেশি সুস্বাদু এবং লোভনীয়। বিশেষ করে আপনি ভাতের সাথে এই আচার দিয়ে খেলে আপনি অনেক পরিমাণে খাবার খেতে পারবেন।চলুন এবার বাসায় করমচার আচার তৈরি করতে আপনার যেসব জিনিস প্রয়োজন হবে তা জেনে নেয়।

করমচা,পাঁচফোড়নের গুঁড়ো,চিনি,সরিষাবাটা,হলুদ এবং মরিচের গুঁড়ো,সামান্য সরিষার তেল,সামান্য পরিমাণে আদা এবং রসুন বাটা কয়েকটি রসুন এবং শুকনো মরিচ পাঁচফোড়ন।এরপর প্রথমে আপনাকে করমচা গুলোকে অর্ধেক করে সেখান থেকে বিচি বের করে নিতে হবে।তারপর ভালোভাবে পানির সাহায্যে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

তারপর একটি কড়াইয়ে সরিষার তেল দিবেন তেল যখন গরম হবে তখন সেখানে পাঁচফোড়ন দিয়ে দিবেন কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর আদা এবং রসুনের বাটা রয়েছে সেগুলো দিয়ে দিবেন।এরপর কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করার পর শুকনো মরিচ দেওয়ার পর পর করমচা গুলো দিয়ে দিবেন।সবগুলো করমচাদেওয়ার পর কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর ঢেকে দিবেন।দুই থেকে তিন মিনিট ঢেকে রাখার পর আবারও ঢাকনা তুলে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নিবেন।

যখন দেখবেন সিদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে আসছে।তখন সেখানে চিনি দিয়ে দিবেন এবং কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর আবারো ঢুকিয়ে দিবেন।এভাবে কয়েক মিনিট ঢেকে রাখার পর দেখবেন আঠা ভাব তৈরি হয়ে গেছে।এই আঠালো ভাব তৈরি হওয়ার পর সেখানে পাঁচফোড়ন দিয়ে দিবেন এবং কিছুক্ষণ জ্বাল দেওয়ার পর চুলা থেকে নামিয়ে নেবেন।তৈরি হয়ে গেল সুস্বাদু করমচার আচার।

করমচা গাছের অন্যান্য অংশের উপকারিতা

করমচা ফলের পাশাপাশি করমচা গাছের রয়েছে নানা কার্যবলী।যেমন করমচা গাছের পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি পান করলে কালাজ্বর দ্রুত নিরাময় সাধন করে।এছাড়াও করমচা গাছের মূলে রয়েছে হৃদরোগ নিরাময়ের উপকারী বিভিন্ন উপাদান।


ক্যারিসোন,বিটাস্টেরল,ট্রাইটারপিন,ক্যারিনডোনা ও লিগনাম যা কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।করমচা গ্রাম অঞ্চলের জনপ্রিয় হলেও শহরে দেখা মিলে খুবই কম।গ্রীষ্মের শেষে এবং বর্ষার শুরুর মুহূর্তে পথে-ঘাটে বিক্রেতার ঝুড়িতে দেখতে পাওয়া যায় করমচা।

পরিশেষে লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি করমচা ফল খাওয়ার উপকারিতা সহ বিভিন্ন ট্রাফিক এর উপর আপনাদের একটি ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।করমচা ফল আমরা অনেকে খেতে পছন্দ করি না।কিন্তু আপনি যদি বিভিন্ন রোগ থেকে সুস্থ  থাকতে চান।তাহলে করমচা খাওয়ার বিকল্প নেই।

কারন করমচা ফলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের জীবনে প্রয়োজন।আপনি চাইলে এখন থেকে করমচা সিজনে বেশি না পারলেও কম করে হলেও খেয়ে দেখতে পারেন।এতে আপনার শরীরের বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটছে।

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন।তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের জানার সুযোগ করে দিন।এমন আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে ওয়েবসাইটটি ফলো করে সাথেই থাকুন।ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url